ধূমকেতু ৬৭পি-এর কাছে পৌঁছেছে ইউরোপীয় মহাকাশ যান রোসেটা
![]() |
ধূমকেতু ৬৭পি-এর কাছে পৌঁছেছে ইউরোপীয় মহাকাশ যান রোসেটা |
Daily Amardesh.com
Aug 9 2014 Saturday
সত্যিই যেন একটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও কিন্তু এমনটাই মনে হচ্ছে। ১০ বছর ধরে ধাওয়া করার পর, শেষে বুধবার ধূমকেতু ৬৭পি বা চুরিয়মোভ-গেরাসিমেনকোর কাছে পৌঁছেছে ইউরোপীয় মহাকাশ যান রোসেটা।পৃথিবী থেকে প্রায় ৫০ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকা ধূমকেতুটিকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণের চেষ্টায় বড় সাফল্য পেয়েছে রোসেটা। বিজ্ঞানীদের আশা পৃথিবীতে প্রাণের উত্স যে কার্বন এবং পানি, তা এই ধূমকেতু থেকেই এসেছিল কিনা সেটা পরীক্ষা করে থেকে জানা যেতে পারে। রোসেটা নামের এই যানটির লক্ষ্য হচ্ছে আগামী এক বছর ধরে ধূমকেতুটিকে প্রদক্ষিণ করা এবং সেখানে একটি ল্যান্ডার অবতরনযান পাঠিয়ে তার উপাদানগুলো পরীক্ষা করা। এই প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছে প্রায় দু’শ কোটি ডলার।
২০০৪ সালের ২ মার্চ রোসেটা মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সৌরমণ্ডলের ভেতর দিয়ে যাত্রা শেষে ৬৭পি ধূমকেতুর পাশে পৌঁছায় যানটি। ধূমকেতুর কাছে পৌঁছাতে গিয়ে রোসেটাকে নানা বাধা পেরিয়ে অতিক্রম করতে হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি কিলোমিটার পথ। এই যাত্রাপথে জার্মানির ডার্মস্টাট শহর থেকে বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা তাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
রোসেটা মহাকাশযান এখন ধূমকেতুর পাশে নিজেকে এমনভাবে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে যাতে ধূমকেতুর কক্ষপথে এটি পাশাপাশি প্রদক্ষিণ করতে পারবে। জার্মানির ডার্মস্টাটে সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে অভিযানের সাফল্য ঘোষণা করেন ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ইএসএ মহাপরিচালক জ্যঁ জ্যাকস ডর্ডাইন বলেন, দশ বছর, পাঁচ মাস এবং চারদিন ঘোরার পর এবং সূর্যকে পাঁচবার প্রদক্ষিণ করার পর চারশ’ কোটি মাইল ঘোরার পর অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছেছে রোসেটা। এখন আমরা বিজ্ঞানের একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে পা রেখেছি। এটাই সুযোগ।
এর আগের মিশনগুলোতে যে মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে সেগুলো ধূমকেতুর গতিপথের কাছ দিয়ে দ্রুত পার হয়ে গেছে। কেবল ধূলিকণার নমুনা এবং কিছু তথ্য সংগ্রহ ছাড়া ওই মিশনে আর কিছু অর্জন সক্ষম হয়নি। এই দীর্ঘ পথে শক্তি বাঁচানোর জন্য রোসেটাকে ৩১ মাসের জন্য অকেজো করে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার কাজ আবার চালু করা হয়।
গত দু’মাস ধরে ধীরে ধীরে কমানো হয়েছে রোসেটার গতি। ধূমকেতুটির গতি ঘণ্টায় প্রায় ৫৫ হাজার কিলোমিটার। আগামী ১৫ মাস ধরে রোসেটা এভাবেই ঘুরবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে এ বছরের নভেম্বরে রোসেটার সঙ্গে থাকা যান ফিলায়ে ল্যান্ডারকে ধূমকেতুর উপরে নামাতে চায় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সবকিছু যদি পরিকল্পনামাফিক চলে, তাহলে নভেম্বর নাগাদ তারা রোসেটাকে ফিরিয়ে আনতে মহাশূন্যে একটি অবতরণযান পাঠাবেন। ধূমকেতুর উপরে গর্ত করে পরীক্ষা চালানোরও পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির। এর ফলে ধূমকেতু সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। হয়তো নভেম্বরে ধূমকেতুটির বরফস্তরে প্রবেশ করতে পারে রোসেটা।
রোসেটা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক বিজ্ঞানী অবশ্য সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানালেন, মিশন ইমপসিবল, অর্থাত্ যানটির অবতরণ অসম্ভব একটি কাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, অবতরণে ব্যর্থ হলেও ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত ওই ধূমকেতুকে প্রদক্ষিণ করার সময় বেশকিছু নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। প্রাচীন মিশরের সাংকেতিক লিপি হায়ারোগ্লিফিকস-এর জনক রোসেটা স্টোনের নামে এই মহাকাশ গবেষণাযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘রোসেটা’। সূত্র : ডিডব্লিউ
News Link : http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/08/09/252228#.U-Vqge2yBNM
Comments