এফবিআই (F.B.I)

এফবিআই (F.B.I)
১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড নিক্সন। ১৯৭২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হন। জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। কিন্তু এবার তিনি পদত্যাগ করেছিলেন দুই বছরের মাথায়। তাও ইচ্ছায় নয়; একেবারে বাধ্য হয়ে। ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন। একই সাথে নিক্সনের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে হয়েছিল জেল খাটতে।

১৯৭২ সালে নির্বাচনের মৌসুমে নিক্সনের নির্দেশে ডেমোক্র্যাট পার্টি অফিসে বসানো হয়েছিল আড়িপাতা যন্ত্র। আর এ বিষয়টি ওয়াশিংটন পোস্ট গুরুত্বের সাথে ছাপে। ওই সময়ের দিনগুলোতে মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র ওপর নিক্সন প্রশাসনের খবরদারি চলছিল। অন্য দিকে এফবিআই চাচ্ছিল প্রশাসনের খবরদারি থেকে মুক্তি এবং আরো বেশি স্বাধীনতার। এ নিয়ে হোয়াইট হাইসের সাথে এফবিআই’র চলছিল ঠাণ্ডা লড়াই। সেই লড়াইয়ে নিক্সন প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে ডেমোক্র্যাট অফিসে আড়িপাতার খবর পত্রিকায় সরবরাহ করেছিলেন এফবিআই’র দ্বিতীয় শীর্ষ ও মার্কিন প্রশাসনের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি মার্ক ফেল্ট। আর এই দায় নিয়েই পদত্যাগ করতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের একজন রিচার্ড নিক্সনকে।

গোয়েন্দাবৃত্তি পৃথিবীতে নতুন কোনো বিষয় নয়। গণতান্ত্রিক দেশেও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অবধারিত। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক ইত্যাদি সব বিষয়েই বিস্তৃত পরিসরে গোয়েন্দাবৃত্তি চালানো হয়। পৃথিবীর যেসব দেশ যত বেশি শক্তিশালী সেসব দেশের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা, অবকাঠামো ততটা ব্যাপ্ত, সমন্বিত ও আধুনিক। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এমন একটি দেশ। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটির যেমন সফলতা রয়েছে তেমনি রয়েছে ব্যর্থতাও। গোয়েন্দাবৃত্তিতে সংস্থাটি অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও এর বিরুদ্ধে অভিযোগও কম নয়।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে কোনো নাম ছিল না
এখন থেকে ১০০ বছর আগে ১৯০৮ সালের ২৬ জুলাই গঠন করা হয় এফবিআই। শুরুতে কোনো নাম দেয়া হয়নি। ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের অধীন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য ফোর্স নিয়োগ দেয়া হয়। দায়িত্ব দেয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেল চার্লস জে. বোনাপার্টকে। এভাবেই ছোট একটি গ্রুপ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় এফবিআই। আর বর্তমানে এর কর্মী সংখ্যা ৩০ হাজার ৮৪৭ জন। ফিল্ড অফিস রয়েছে ৫৬টি। স্যাটেলাইট অফিস চার শতাধিক। রয়েছে ৬০টি আন্তর্জাতিক লিয়াজোঁ অফিস। এর ডিরেক্টর নিয়োগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এ জন্য অনুমতি নিতে হয় সিনেটের। ২০০৭ সালে সংস্থাটি খরচ করে ৬.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৪৬ হাজার কোটি। সংস্থাটির নীতিবাক্য হচ্ছে ‘Fidelity, Bravery and Integrity’

এফবিআই প্রতিষ্ঠাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন থিওডর রুজভেল্ট। একটু পেছনের অর্থাৎ ১৮৯২ সালের কথা। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তখন ছিলেন সিভিল সার্ভিস কমিশনার। সিভিল সার্ভিসকে পুনর্গঠনের জন্য ওই বছর তিনি বোনাপার্ট নামের এক ঊর্ধ্বতন আইন কর্মকর্তার সাথে দীর্ঘ আলাপ করেন। তখন ফেডারেল আইনের সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তাব করা হয় রাজনৈতিক নেতা ও সিভিল প্রশাসনের জন্য আলাদা আইন করার। ১৯০১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার চার বছর পর বোনাপার্টকে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেন রুজভেল্ট। ১৯০৮ সালে বোনাপোর্ট প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে একটি বিশেষ বাহিনী তৈরির প্রস্তাব দেন। তারই পরামর্শ অনুযায়ী কোনো প্রকার অফিসিয়াল পদবী ছাড়াই একটি বাহিনী তৈরি করা হয়। পরে এই বাহিনীর নাম দেয়া হয় ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।

কাজ মার্কিন নিরাপত্তাকে আরো সুসংহত করা
মার্কিন নিরাপত্তাকে আরো সুসংহত করার জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয় ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। সন্ত্রাস দমন, দেশের অভ্যন্তরে অন্য দেশের গোয়েন্দা তৎপরতা, ক্রিমিনাল আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং এ সংক্রান্ত তথ্য রাষ্ট্র, বিচারবিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করে সংস্থাটি। ১০টি ক্ষেত্রে সংস্থাটি বেশি গুরুত্ব দেয়। এগুলো হচ্ছে সন্ত্রাসী হামলা থেকে দেশকে মুক্ত রাখা। দেশের অভ্যন্তরে অন্য দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতা ও গোয়েন্দাগিরি নিয়ন্ত্রণ। দেশের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ। দেশের সব পর্যায়ের অপরাধ প্রতিরোধ। বেসামরিক আইন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন ও তাদের মদদদাতাদের থেকে দেশকে রক্ষা করা। অদৃশ্যমান অপরাধ দমন। সংগঠিত উগ্র সন্ত্রাস দমন। ফেডারেল, রাজ্য, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সহায়তা দেয়া। এফবিআই’র মিশনে সফলতার জন্য নিয়মিত প্রযুক্তি উন্নয়ন। এফবিআই আইন প্রয়োগে কাউকে বাধ্য করতে পারে না। পলিসির আলোকে সংস্থাটিকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও এর গবেষণা কাজ করতে হয়। 
একনজরে এফবিআই
প্রতিষ্ঠা
১৯০৮
এফবিআই নামকরণ
১৯৩৫
প্রথম ডিরেক্টর
স্ট্যানলি ফিনস

জনবল
৩০,৮৪৭ (৩০ জুলাই ২০০৮)।
বাজেট
৬.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০০৭)
ফিল্ড অফিস
৫৬টি
লোকাল অফিস
৪ শতাধিক (রেসিডেন্ট এজেন্সিজ)
আন্তর্জাতিক অফিস
৬০ (লিগ্যাল এটাসেস)
নীতিবাক্য
Fidelity, Bravery and Integrity
ওয়েব সাইট
www.fbi.gov

জনবল ৩০ সহস্রাধিক
গত ৩০ জুন এফবিআই’র মোট জনবল ছিল ৩০ হাজার ৮৪৭ জন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭৩৮ জন বিশেষ এজেন্ট, ১৮ হাজার ১১০ জন সাপোর্ট প্রফেশনালস। এদের কেউ ইন্টেলিজেন্স অ্যানালিস্ট, ল্যাঙ্গুয়েজ স্পেশালিস্ট, সাইন্টিস্ট ও ইনফরমেশন টেকনোলজি স্পেশালিস্ট। এ ছাড়াও অন্য পেশার লোকও এফবিআই’র কর্মী হিসেবে কাজ করছে।

বাজেট ৬.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
২০০৭ সালের সংস্থাটির বাজেট ছিল ৬.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাজেটের ৩১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে কাজ সম্প্রসারণে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সন্ত্রাস দমন, সন্দেহভাজন ব্যক্তির ওপর কড়া নজর, তথ্য প্রযুক্তি, আইনঘটিত চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও তথ্য আদান-প্রদান প্রোগ্রাম।

হেডকোয়ার্টার ওয়াশিংটন ডিসিতে
এফবিআই’র হেড কোয়ার্টার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির পেনসিলভেনিয়া এভিনিউতে। সংস্থাটির স্পেশাল এজেন্ট ও সাপোর্ট পার্সোনালরা হেডকোয়ার্টারে অফিস করেন। তারাই দেশ ও দেশের বাইরে এফবিআই’র কাজের সমন্বয় ও সংগঠিত করেন। হেডকোয়ার্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বণ্টন। সংগৃহীত তথ্য সঠিক কি না তা যাচাই বাছাই করা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ হওয়া উচিত তা এখান থেকেই বলা হয়। 

সারা বিশ্বেই এর শাখা রয়েছে
এফবিআই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা হলেও বিশ্বেই এর কাজ ও শাখা বিস্তৃত। দেশের অভ্যন্তরে প্রধান প্রধান শহরে সংস্থাটির রয়েছে ৫৬টি ফিল্ড অফিস। এ ছাড়া দেশের ছোট শহরে রয়েছে চার শতাধিক রেসিডেন্ট এজেন্সিস। দেশের বাইরে রয়েছে ৬০টি আন্তর্জাতিক অফিস। এ অফিসের নাম দেয়া হয়েছে ‘লিগ্যাল এটাচেস’। এসব অফিস সংশ্লিষ্ট দেশের যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস পরিচালনা করছে। যেসব দেশে এফবিআই’র অফিস রয়েছে সেগুলো হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের মিসর, সেনেগাল, সিয়েরালিয়ন, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরক্কো। উল্টর-দণি আমেরিকা মহাদেশের কলম্বিয়া, ব্রাজিল, বারবাডোস, আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা, মেক্সিকো, কানাডা, পানামা, চিলি, ডমিনিকান রিপাবলিক ও এল সালভেদর। এশিয়া মহাদেশের থাইল্যান্ড, চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও জাপান। ইউরেশিয়ার কাজাখস্তান, তুরস্ক, গ্রিস, রুমানিয়া, ইউক্রেন, রাশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ইসোনিয়া, জর্জিয়া ও পোল্যান্ড। ইউরোপ মহাদেশের জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি ও অস্ট্রিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্দান, ইরাক, কাতার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও ইসরাইল।

তথ্য সংগ্রহের বড় মাধ্যম মিডিয়া
এফবিআই’র কর্মকৌশল বিশ্বের আর দশটা গোয়েন্দা সংস্থার মতোই। তবে কাজ করতে গিয়ে সিআইএ যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে সেটা বিশ্বের কোনো গেয়েন্দা সংস্থাই করতে পারে না। বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে এর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। সিআইএ’র তথ্য সংগ্রহের বড় মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়া বা সংবাদমাধ্যম। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেল, সরকারি প্রকাশনা, পরিসংখ্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে সংস্থাটি তথ্য সংগ্রহ করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, মিডিয়াকর্মী ও বিভিন্ন পেশার পদস্থ কর্মকর্তাদের কিনে নেয় সংস্থাটি। দেশ ও দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্মকাণ্ডে সংস্থাটিকে তীক্ষ নজর রাখতে হয়। এ ছাড়া ভূ-উপগ্রহ, ইন্টারনেট, গোয়েন্দা বিমান ও ফোনে আড়ি পেতেও সংস্থাটি তথ্য সংগ্রহ করে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বিশ্বের সব দেশে ছড়িয়ে আছে এফবিআই’র নিজস্ব এজেন্ট। এরা অত্যন্ত দক্ষ ও চতুর। এরা সব পরিস্থিতির সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে। এরা ছদ্মবেশেও থাকে আবার মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা হিসেবেও থাকে।

গোয়েন্দাবৃত্তিতে অন্য দেশকে সহযোগিতা করে
সংস্থাটি গোয়েন্দাবৃত্তিতে সহযোগী দেশকে সহযোগিতা করে। কোনো দেশ সংস্থাটির সহযোগিতা চাইলে জনবল ও প্রযুক্তি দিয়ে তাকে সহযোগিতা করে। এ জন্য গঠন করে টাস্ক ফোর্স। বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করে এ সংস্থা। এ জন্য সংস্থাটি ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠা করে এফবিআই ন্যাশনাল একাডেমি। এখানে নিজ দেশের গোয়েন্দাদের ছাড়াও বাইরের দেশের পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকা প্রকাশ করে ইন্টারনেটে
এফবিআই সব সময়ই তাদের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকা প্রকাশ করে। সাধারণত সংস্থাটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়াও পত্রপত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে তাদের ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও সম্প্রচার করে। বর্তমানে ১০ মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকার শীর্ষে রয়েছে আল কায়েদার নাম।

অসাংবিধানিক ছিল ব্লাক ব্যাগ অপারেশন
দেশ ও দেশের বাইরে সংস্থাটিকে অনেক অপারেশন পরিচালনা করতে হয়েছে। এসব অপারেশন পরিচালনা করতে গিয়ে বৈধ ও অবৈধ উভয় পথই গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। সংস্থাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ অবৈধ অপারেশনের নাম ব্লাক ব্যাগ অপারেশন। এফবিআই’র এজেন্টরা ১৯৪২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে অথবা টার্গেট ব্যক্তি বা সংগঠনকে কড়া নজরদারির জন্য ভিন্ন একটি কৌশল গ্রহণ করেছিল। এ জন্য সংস্থার এজেন্টরা গোপনে টার্গেটের অফিস বা সম্ভাব্য যেকোনো স্থানে নজরদারি করত। সংগ্রহ করত বিভিন্ন ফটোগ্রাফট তথ্য। প্রবেশ করত নিষিদ্ধ এলাকায়। গোপনে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়েরও ছবি নিত এজেন্টরা। ১৯৬৭ সালে এ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। আর ১৯৭২ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্ট এফবিআই’র এ কাজকে অসাংবিধানিক বলে বন্ধ করে দেয়।

তৈরি করেছিল স্পাই রিং
বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এফবিআই তৈরি করেছিল স্পাই রিং। যুদ্ধকালীন এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গোয়েন্দাগিরি। এর উদ্দেশ্য ছিল এফবিআই’র এজেন্টদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি। রিংয়ের প্রধান ছিলেন ফ্রেডরিক। তার পুরো নাম ফ্রিটজ জবার্ট ডুকুয়েনস। এটি ডুকুয়েনস স্পাই রিং নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের প্রধানসহ ৩৩ জনকে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিভিন্ন মেয়াদে তাদের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল ৩০০ বছর। এদের কেউ গোয়েন্দাগিরিতে অস্বাভাবিক দেরি করেছিল। কেউ ছিল ডাবল এজেন্টের ভূমিকায়।

শেষ কথা
এফবিআই’র বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক চোরাচালান, নারী পাচারসহ নানা অপকর্মে সহায়তার অভিযোগ। এসব করতে গিয়ে অনেক সময় মূল কাজ থেকে বিচ্যুতও হয়েছে কখনো। অসতর্কতার কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের অনেক গোপন বিষয় পাচার হয়েছিল জার্মান, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ অনেক দেশে। মোসাদের খবরদারি থেকে সংস্থাটি মুক্ত হতে পারেনি। নাইন-ইলেভেনের কোনো আগাম তথ্যও সরকারকে দিতে পারেনি এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে অনেক গোয়েন্দা উপগ্রহ। বিশ্বের ইন্টারনেট প্রযুক্তির বেশির ভাগই দেশটির নিয়ন্ত্রণে। সাইবার ক্রাইম রোধে রয়েছে বিশাল বাজেট। এরপরও এসব বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই সংস্থাটি সফল হয়নি। দেশটিতে অপরাধ ও অপরাধীর মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সাম্রাজ্যের জাল বিস্তার করছে তা রক্ষার জন্য যে প্রযুক্তি, জনবল ও কৌশল দরকার তার অনেক কিছুই সংস্থাটি দিতে পারছে না। হয়তো সামনে অনেক ব্যর্থতাই সংস্থাটিপল ঘিরে ফেলবে।
টাইমলাইন
২৬ জুলাই ১৯০৮
কোনো নাম না দিয়ে স্পেশাল এজেন্ট ফোর্স গঠন।
১৬ মার্চ ১৯০৯
ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন নামে কার্যক্রম পরিচালনা।
১ জুলাই ১৯৩২ 
নাম পরিবর্তন করে ইউএস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন করা হয়।
১০ আগস্ট ১৯৩৩ 
আলাদা মর্যাদা দিয়ে নাম দেয়া হয় ডিভিসন অব ইনভেস্টিগেশন।
১ জুলাই ১৯৩৫
ফেডারেল ব্যুরো অব ইভেস্টিগেশন (এফবিআই) নামকরণ।
তথ্য সুত্র ইন্টারনেট

Comments

Popular posts from this blog

হার না মানা বেগম জিয়া

প্রেসিডেন্ট জিয়া বললেন, এ গাড়ি কে পাঠিয়েছে?

স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি - প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান